স্টাফ রিপোর্টার :
করোনাভাইরাস মহামারী কিংবা ইউক্রেইন যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক ঘটনার মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠেকবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “একটার পর একটা ধাক্কা আসে। করোনার ধাক্কা কাটাতে না কাটাতে আবার যুদ্ধাবস্থার ধাক্কা। এই জন্য একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়।তবে আমি এটা বিশ্বাস করি যে বাঙালি জাতি যে কোনো অবস্থা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে।”
আমিরাত সফররত প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আবু ধাবি থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সেই ভাষণে তিনি একটি কথা স্পষ্ট বলেছিলেন- ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এই বিশ্বাস তারও রয়েছে।
“আমরা যেখানেই থাকি, যেভাবেই থাকি, আমাদের মেধা, আমাদের মনন, আমাদের শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাব এবং বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের কল্যাণ ও তাদের নানা সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের পরিবর্তনটা আপনারা দেখেছেন। এই ১৩টা বছরে একটানা গণতান্ত্রিক ধারাটা এদেশে অব্যাহত ছিল বলেই, আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই কিন্তু আজকে এই উন্নতি হয়েছে।
“কারণ এই প্রতিষ্ঠান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া। এই প্রতিষ্ঠান নিয়েই তিনি এদেশ স্বাধীন করেছেন। কাজেই আমাদের একটা আন্তরিকতা বা দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি যে দেশটাকে আমার উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”
দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে জমিসহ যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে, সেটাও প্রবাসীদের জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর পুষ্টি নিরাপত্তাও দিচ্ছে। এখন আর মানুষের সেই হতদরিদ্রভাবটা নেই এবং এটা থাকবেও না। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে।
লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। কারণ একদিনে তো আর সব হয় না। ধীরে ধীরেই হয়। একটা গাছ লাগালেও ফল পেতে সময় লাগে। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।”
পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় প্রবাসীরাও এখন মাথা উঁচু করে চলতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রবাসীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “যখন যে দেশে থাকবেন, সেই দেশের আইন মেনে চলবেন। সেই দেশের নিয়ম মেনে চলবেন। সেই দেশের কাছে যেন আমাদের দেশের মুখটা বড় থাকে। আমাদের দেশের সম্মান যেন কখনও নষ্ট না হয়।
“এতে যেমন নিজের সম্মান,নিজের নিরাপত্তা, নিজের দেশের সম্মান বা যে দেশে আপনি কাজ করছেন সেই দেশের সম্মানটাও আপনাদেরকে রক্ষা করে চলতে হবে।”
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরার পর প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশকে আর কখনও কেউ পেছনে টানতে পারবে না। একটা কালো মেঘ পঁচাত্তরের পর আমাদের জীবনে ছিল, সেই কালো মেঘ কেটে গেছে।
“এখন আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত একটি দেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।”
দুবাইয়ে বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আবু ধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, এফবিসিআইআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। রাস আল খাইমাহ প্রান্তে থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর।
প্রধানমন্ত্রী রাস আল খাইমাহে বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবন উদ্বোধন করেন।