প্রফেসর ড. আহমদ আবুল কালাম :
রমজানকে আমাদের বিদায় দিতে হবে, আমরা বাধ্য , কিন্তু রমজানের ইবাদাতগুলোকে বিদায় দেয়ার প্রয়োজন নেই, রমজানীয় কার্যক্রম সমগ্র জীবনব্যাপী সঙ্গেই রাখতে পারি অব্যাহতভাব । যেমন
১. সিয়াম: সপ্তাহে সোম, মঙ্গল ও বৃহস্প তিবার এবং শাওয়াল, জুলহাজ্জ, মুহাররাম ও মাসিক তিনটি সিয়াম পালন করতে পারি।
২. তাহাজ্জুদ: রমজানের মতই প্রতিরাতে কিয়ামে লাইল (রাতের নামাজ/তাহাজ্জুদ) আদায়ের অভ্যাস অব্যাহত রাখতে পারি।
৩. ইতিকাফ: ৭/১০/১ দিনব্যাপী বা ২/৪ ঘণ্টাব্যাপী মসজিদে ইতিকাফ করতে পারি।
৪. মসজিদ সংযুক্তি: রমজানে মুমিনের মসজিদে যাতায়াত সর্বাধিক থাকে, মসজিদের সঙ্গে সংযুক্তি মোমিনের জীবনব্যাপী গ্রহণীয় একটি বাধ্যতামূলক আমল।
৫. সাদাকাতুল ফিতর: ঈদুল ফিতরের সাথে সম্পৃক্ত সাদাকা পরে নেই; কিন্তু সাধারণ সাদাকা মুমিন সমগ্র জীবনব্যাপী আদায় করবে, এটিও একটি
জীবনব্যাপী ঈমানদারের শ্রেয় আমল।
৬. দান: রমজানের অন্যতম মৌলিক ইবাদত দান-সদকা করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি হওয়া সত্বেও রমজানে প্রবাহমান বায়ুর চেয়ে বেশি দান-সাদকা করতেন। দান-ছদকার এই পদ্ধতি আমরা পরবর্তী 11 মাস আমল করতে পারি।
৭. কুরআন তিলাওয়াত: রমজানের একটি খাস ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত। এটি দু’ভাবে আদায় করা হয় ১. সালাতের ভেতরে ২. সালাতের বাইরে। রমজানকে বিদায় দিলেও এই ইবাদতকে বিদায় দেয়ার কোন কারণ নেই।
৮. কুরআন অনুধাবন: হাদীসের পরিভাষায় একে বলা হয় মুদারাসাতুল কুরআন। কুরআনে এর প্রতিশব্দ এসেছে তাদাব্বুরুল করআন।
আসলে অর্থ বুঝে কুরআন পড়া, বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়া। এই প্রকার ইবাদত আমরা রমজানে বেশি বেশি করলেও বাকি ১১ টি মাস এ ইবাদতটি অব্যাহত রাখা আমাদের ঈমানী কর্তব্য।
৯. দুয়া প্রার্থনা: রোজা অবস্থায় দুআ কবুল হয়, তাই রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ বেশি বেশি দুআ করা। রোজা রমজান না থাকলেও দুয়া কবুলের আরো বহু অনুষঙ্গ আছে। যেমন শুক্রবারে দুয়া কবুল হয়। রাতে দুয়া কবুল হয়। সফরের দুয়া কবুল হয়। কবর জিয়ারতে ও রোগীর সেবায় দুয়া কবুল হয়।
এরকম স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় দুয়া কবুলের নিশ্চিত অবস্থানে সমগ্র জীবনব্যাপী দুয়া করা যেতে পারে।
১০. সংযম যাপন: এটি রমজানের সিয়ামের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। সিয়াম পালনরত না থাকলেও সংযম মুমিনের জীবনের সার্বক্ষণিক অনুষঙ্গ করা চাই। সংযম ব্যতিরেকে মুমিন ঈমানী জীবন-যাপন করতে পারে না। সিয়ামরত না থাকলেও মুমিন মূর্খতা অবলম্বন করবে না, অশ্লীল কাজ করবে না, মিথ্যা কথা-কাজ করবে না, গীবত করবে না।
১১. জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ: রমজানের সিয়াম-এর মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হলেও মুমিন তার সমগ্র জীবনব্যাপী জৈবিক চাহিদা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে ঈমান রক্ষার স্বার্থে।
১২. পানাহার নিয়ন্ত্রণ: মুমিন এ কাজটিও সমগ্র জীবনব্যাপী করবে।
১৩. কঠোর ও দীর্ঘ ইবাদত: এটি রমজানের প্রধান অনুষঙ্গ হলেও বাকি 11 টি মাসেও ঈমানদার ব্যক্তি পার্থিব কার্যক্রমের চেয়ে ইবাদাত-বন্দেগী বেশি গুরুত্বসহ করবে, এতে গভীর মনোনিবেশ প্রদান করবে এবং ভীষণ কষ্ট হলেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও ইবাদত-বন্দেগী করবে।
এ আলোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের থেকে রমজান বিদায় নিলেও রমজানের যাবতীয় কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখতে পারি এবং সেগুলো অব্যাহত রাখা আমাদের ঈমানী কর্তব্য।
আমরা রমজানকে বিদায় দিতে পারি তবে রমজানের কোন আমলকে বিদায় দিতে পারি না। বিদায় দেয়ার সুযোগ নেই। বিদায় দেয়া সংগত হবে না।
রমজানের যাবতীয় আমলকে আল্লাহ আমাদের সমগ্র জীবনব্যাপী সার্বক্ষণিক আমলে পরিণত করুন,।
আমীন, আল্লাহুম্মা আমীন।