স্টাফ রিপোর্টার :
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের মদীনা আশিক টাওয়ারের ১৭ তলায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সেখানে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ইরফানের দাদা বাড়ির গলি থেকে বের হয়ে ডানদিকের সড়ক ধরে হেঁটে সামনে গেলেই সুউচ্চ মদীনা আশিক টাওয়ার। বাণিজিক এই ভবনের ১৬ তলায় হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা ডেভেলপারের অফিস। আর ভবনের ছাদে (১৭ তলায়) এক কক্ষের রুমটি ইরফান সেলিমের কার্যালয়। মূলত এই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার হতো।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর চকবাজারের চক সার্কুলার রোডে অবস্থিত মদীনা আশিক টাওয়ারে টপফ্লোরে একটি কক্ষে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় নির্যাতন চালানোর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে- কয়েক ধরনের দড়ি, হাতুড়ি, রড, মানুষের হাড়, বেশ কয়েকটি গামছা, সুইচ গিয়ার চাকু/ছুরি, মোটা বেতের লাঠি, হকিস্টিক, সেভলন ভর্তি বোতল, গ্যাসলাইটার, ফয়েল পেপার, একটি মোটা জিআই পাইপ, হ্যান্ডকাফ, দুটি স্কিন স্কচটেপ, ট্রাইপডসহ নেটওয়ার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিনা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়ির পাশে চকবাজারে একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া যায়। তথ্য অনুযায়ী চকবাজারের মদীনা আশিক টাওয়ারের ছাদে থাকা একটি কক্ষে র্যাব অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে হ্যান্ডকাফ, দড়ি, চাকু, লাঠিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ওই কক্ষটি একটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
মদীনা আশিক টাওয়ারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের ১৬ তলায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ডেভেলপার অফিসের পাশে বিশাল সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই ভবনের ছাদ। সেখানে বিশাল একটি কক্ষ। কক্ষটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কক্ষের পাশে ব্যাটমিন্টন খেলার জন্য জায়গাও রয়েছে। কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায় দুই পাশে সোফা। সামনে একটি টেলিভিশন। আর কক্ষের ভেতরে একটি বড় টেবিল ও চেয়ার। কক্ষের মধ্যখানে বিশাল খালি জায়গা রয়েছে।
অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি এই কক্ষে মানুষজনকে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামাদি দিয়ে টর্চার করা হতো। পাশাপাশি এখানে মাদক সেবন করা হতো বলেও তথ্য রয়েছে। এই কক্ষে ফয়েল পেপার ও গ্যাসলাইটার পাওয়া গেছে। যা দেখে বোঝা যায় এখানে ইয়াবাও সেবন করা হতো। টর্চার সেলের বিষয়ে ইরফান ও তার দেহরক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের চাঁন সরদার দাদার বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ইরফানের বাসা থেকে ২টি পিস্তল, ১টি এয়ারগান, ২টি ম্যাগাজিন, ৪ রাউন্ড এ্যামোনেশন, ৪০৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১২ ক্যান বিয়ার, ৬ বোতল বিদেশি মদ ও ৩৮টি ওয়াকিটকি সেট ও ওয়ারলেস নেটওয়ার্কিংয়ের অবৈধ ভিএইচপি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।
কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে মদপান ও বেআইনিভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৮ মাসের সাজা দিয়েছেন। এদিকে তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে বেআইনি ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য ৬ মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সোমবার দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে তাদের কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে ভোরে ধানমন্ডিতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম নিজেই বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমানকে (৩০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ইরফানের গাড়ি ওয়াসিমকে ধাক্কা মারার পর নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিম সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামান এবং গাড়ির সামনে দাঁড়ান। নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসঙ্গে বলতে থাকেন, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনই মেরে ফেলবো’। এরপর বের হয়ে ওয়াসিমকে কিল-ঘুষি মারেন এবং তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা মারধর করে ওয়াসিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যান। তার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান।