1. shahalom.socio@gmail.com : admin :
  2. ittehadnews24@gmail.com : Ittehad News24 : ইত্তেহাদ নিউজ২৪
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
আজকের এই পবিত্র দিনেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আমাদের পীর ও মুর্শীদ শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ রহ. বাহরে শরীয়ত, মুজাদ্দেদে জামান শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহঃ) একটি জীবন ও আদর্শ নেছারাবাদে আঞ্চলিক সড়ক দুই লেন করন ও গার্ডার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে মানববন্ধন ছারছীনা মাদ্রাসার কামিল’২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের দোয়া ও কামিল’২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের সবক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত আগ্রাসী ইসরাইলকে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দিন -ছারছীনার পীর ছাহেব। বেইলি ব্রিজ ভেঙে বরিশাল-নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি)-এর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অত্র অঞ্চলের জনগন চরম দুর্ভোগে মানবিক করিডোরের নাম দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম বিপর্যয় ও হুমকির মুখে ফেলবেন না। -সরকারকে ছারছীনার পীর ছাহেব যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক মির্জা ফখরুলের অনতিবিলম্বে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হোক: ডা. জাহিদ পবিপ্রবিতে জিএসটি গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত
শিরোনাম
আজকের এই পবিত্র দিনেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আমাদের পীর ও মুর্শীদ শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ রহ. বাহরে শরীয়ত, মুজাদ্দেদে জামান শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহঃ) একটি জীবন ও আদর্শ নেছারাবাদে আঞ্চলিক সড়ক দুই লেন করন ও গার্ডার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে মানববন্ধন ছারছীনা মাদ্রাসার কামিল’২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের দোয়া ও কামিল’২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের সবক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত আগ্রাসী ইসরাইলকে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দিন -ছারছীনার পীর ছাহেব। বেইলি ব্রিজ ভেঙে বরিশাল-নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি)-এর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অত্র অঞ্চলের জনগন চরম দুর্ভোগে মানবিক করিডোরের নাম দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম বিপর্যয় ও হুমকির মুখে ফেলবেন না। -সরকারকে ছারছীনার পীর ছাহেব যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক মির্জা ফখরুলের অনতিবিলম্বে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হোক: ডা. জাহিদ পবিপ্রবিতে জিএসটি গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত

আজকের এই পবিত্র দিনেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আমাদের পীর ও মুর্শীদ শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ রহ.

  • আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার :

পীর শাহ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.) হলেন বাংলার আধ্যাত্মিক আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইসলামের একজন নিরলস সেবক এবং মানবতার ও শান্তির বার্তাবাহক। তার জীবন ছিল ইলম, ইবাদত ও খেদমতে পরিপূর্ণ।

 শরিয়ত ও তরিকতের সমন্বয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক অনন্য আদর্শ, যা আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। অনেকদিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল আমার চোখে দেখা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, আধ্যাত্মিক সাধনা এবং সমাজ সংস্কারে তার অবদান নিয়ে আলোচনা করব। এ যাত্রায় সে চেষ্টাই করেছি।

বাংলা ১৩৫৭ সনে (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ), পিরোজপুর জেলার ছারছীনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পীর শাহ্ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)। তার পিতা শাহ্ আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ্ (রহ.) ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন আলেম, মুজাহিদ এবং তরীকতের কামেল পীর। শৈশব থেকেই পীর মোহেব্বুল্লাহ (রহ.) পিতার সান্নিধ্যে ইলম ও রূহানিয়াতের শিক্ষা লাভ করেন।

শোনা যায়, শৈশবেই তার মধ্যে অলৌকিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। একদিন দরবার শরিফের সামনে খেলাধুলারত শিশু মোহেব্বুল্লাহর দিকে একদল লোক পাকা কলা নিয়ে এগিয়ে এলেন। ছোট্ট মোহেব্বুল্লাহ বললেন, ‘আমাকে কলা দিন।’ লোকেরা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, এগুলো তো কাঁচা! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, যখন তারা কলাগুলো ঝুড়িসহ পিতা আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ (রহ.) এর কাছে পৌঁছালেন, তখন সবগুলো কলাই কাঁচা হয়ে গিয়েছিল! এই ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে এবং সবাই বুঝতে পারেন, এই শিশু সাধারণ নন তিনি বিশেষ মিশন নিয়ে এসেছেন। ঘটনাটি তারপর থেকেই লোকমুখে প্রচলিত হয়ে যায়।
১৯৮০ সালে ফুরফুরা শরিফের পীর হযরত মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মদ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী (রহ.)-এর কন্যার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে দুটি বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক বংশের মেলবন্ধন ঘটে।

♦♦এই সম্পর্ক কেবল বৈবাহিক সম্পর্কই ছিল না, বরং দ্বীনী খেদমতের এক সমন্বিত প্রচেষ্টার সূচনা করেছিল। স্ত্রীর প্রতি তার আচরণে ফুটে উঠত রাসূল (স.)-এর সুন্নতের অনুকরণ। গভীর শ্রদ্ধা, পরম ভালোবাসা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল তাদের সম্পর্ক। পরিবারকে তিনি সর্বদা দ্বীনী পরিবেশে রাখার চেষ্টা করতেন। সন্তানদের লালন-পালনে তিনি ধর্মীয় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন, পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করাতেন।♦♦

পরবর্তীতে তার সংসার দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের আগমনে পূর্ণতা পায়। বড় পুত্র শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমেদ হোসাইন (মা.জি.আ.) বর্তমানে ছারছীনা দরবার শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে পিতার রেখে যাওয়া মিশন অব্যাহত রেখেছেন। দ্বিতীয় পুত্র শাহ্ আবু বকর মুহাম্মদ সালেহ নেছারুল্লাহ্ দ্বীনী খেদমতে বড় ভাই অর্থাৎ বর্তমান পীর ছাহেবের হাতকে শক্তিশালী করতে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। 
 
তিন কন্যা ও তাদের জামাতা সকলেই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। সন্তানদের প্রত্যেককে তিনি ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করেছিলেন, যাতে তারা পিতার আদর্শকে বহন করে নিয়ে যেতে পারে। ১৯৯০ সালে পিতা বীর মুজাহিদ শাহ্ আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ (রহ.) ইন্তেকাল করলে চল্লিশ বছর বয়সে তিনি পিতার স্থলাভিষিক্ত হন।
 
১৯৯৯ সালের অগ্রহায়ণ মাসে ছারছীনা দরবার শরিফের বিশাল মাহফিল মাঠে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিল উপস্থিত লাখো মুসল্লি। ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাজার কমপ্লেক্সের খতিব ও সাদ্দাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ হুসাইন হামদান ছাহেবের আগমন ঘটে। 
♦♦বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় পীর শাহ্ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর প্রতি এক অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি – ইন্নাহু মোহেব্বুল্লাহ ওয়া মোহিব্বুদ্দীন ওয়া মোহেব্বুল মোস্তফা (তোমাদের যিনি পীর, নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহপ্রেমিক, দ্বীনপ্রেমিক এবং রাসূলপ্রেমিক)। এই মহামূল্যবান স্বীকৃতি শুধু একজন ব্যক্তিকে সম্মানিত করেনি, বরং সমগ্র ছারছীনা দরবার শরিফের আধ্যাত্মিক মর্যাদাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।♦♦
তার সাহিত্যকর্ম ছিল তার বহুমুখী প্রতিভার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ‘মিলাদ শরিফ’ ও বারো চাঁন্দের ফজিলত গ্রন্থে তিনি রসুল (স.)-এর পবিত্র সিরাত ও ইসলামি বর্ষপঞ্জির বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে গভীর গবেষণামূলক আলোচনা করেন। ‘খুতবায়ে ছালেহিয়া’ গ্রন্থটি জুমার খুতবা ও বিভিন্ন ধর্মীয় বক্তৃতার এক অনবদ্য সংকলন, যেখানে সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় ইসলামের মৌলিক শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়েছে। চল্লিশটি নির্বাচিত হাদিসের সমন্বয়ে রচিত ‘চল্লিশ হাদিস’ গ্রন্থটি মুসলিম জীবনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
তার খুতবায়ে ইফতেতাহিয়া গ্রন্থে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য প্রণীত বক্তৃতাগুলো ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আদর্শকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। সুফিবাদের চার প্রধান তরিকা – কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া সম্পর্কে গভীর গবেষণা লিপিবদ্ধ হয়েছে চারি তরিকার শাজরা গ্রন্থে। শিশুদের ইসলামি শিক্ষার জন্য রচিত ‘মুসলিম বাল্য শিক্ষা’ বইটি সহজ-সরল ভাষায় ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান পরিবেশন করে।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলেম সমাজ পর্যন্ত সকলেই তার রচনাবলী থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। প্রতিটি বইয়ে তিনি ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যাতে শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল শ্রেণির মানুষ উপকৃত হতে পারে।
এই মহান ব্যক্তিত্বের সাহিত্যকর্ম ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একত্রে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, তিনি কতটা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ইরাকের প্রখ্যাত আলেমের সেই অভূতপূর্ব প্রশংসাবাণী এবং তার রচিত গ্রন্থসমূহ প্রমাণ করে যে, পীর শাহ্ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.) শুধু একজন আধ্যাত্মিক নেতাই ছিলেন না, ছিলেন একজন মর্যাদাপূর্ণ লেখক, গভীর চিন্তাবিদ এবং ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক। 

পীর শাহ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি, তিনি শুধু একজন সাধক বা লেখকই ছিলেন না, বরং ছিলেন যুগের প্রয়োজনে আগত একজন মুজাদ্দিদ। মানুষের রূহানী খোরাক জোগানো, তাদেরকে আল্লাহওয়ালা বানানো, এবং হক্কানি আলেম গড়ার জন্য তিনি যে দ্বীনিয়া আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা ছিল তার মুজাদ্দিদী মিশনেরই অংশ। আদর্শভিত্তিক দ্বীনিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি ইসলামি শিক্ষার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। 
♦♦শুধু প্রতিষ্ঠান গড়েই ক্ষান্ত হননি, দ্বীন বুঝা ও আমল করার জন্য তিনি নিজে বহু মূল্যবান কিতাব রচনা করেন এবং অন্য আলেমদের দিয়ে গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়েছেন। এই ব্যাপক ও বহুমুখী খেদমত দেখেই উপলব্ধি করা যায়, কেন তাকে ‘মুজাদ্দিদে জামান’ বা যুগের সংস্কারক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল।♦♦

তার জ্ঞানের গভীরতা ছিল অতুলনীয়, বিশেষ করে শরিয়তের ক্ষেত্রে। ফিকাহ শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ছিল এমন পর্যায়ের, ফুরফুরা শরিফের পীর তাকে বাহরে শরীয়ত বা শরিয়তের সাগর উপাধি দিয়েছিলেন।

এই উপাধি পাওয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয়। এটি প্রমাণ করে শরিয়তের জ্ঞানে তিনি কতটা গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। তার ফতোয়া ও বিচার-ফায়সালাগুলোতে ফিকাহর গভীর জ্ঞানের সাথে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের অসাধারণ সমন্বয় দেখা যেত।

এই দুই উপাধি- মুজাদ্দিদে জামান ও বাহরে শরিয়ত- একসাথে বিবেচনা করলে আমরা পীর ছাহেবের ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাই। একদিকে তিনি ছিলেন যুগের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সংস্কারক, অন্যদিকে শরিয়তের গভীর সমুদ্রসদৃশ জ্ঞানের অধিকারী। এই দুটি গুণের সমন্বয়ই তাকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে রেখেছে। তার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনিয়া মাদরাসাগুলো আজও সেই জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, তার রচিত গ্রন্থাবলী এখনও পথহারা মানুষকে পথ দেখাতে সহায়তা করছে। 
♦♦ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অটল ও সোচ্চার। বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়ে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিতেন। মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতেন। রাজপথে আন্দোলন করে ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার চেষ্টা করতেন। তার এই সংগ্রামী ভূমিকা তৎকালীন সমাজে ইসলামের আলো ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।♦♦
প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার ত্রাণ কার্যক্রম ছিল লক্ষণীয়। ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ ও ২০০৭ সালের ভয়াবহ বন্যাসহ দেশের ক্রান্তিলগ্নের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার মানবিকতা ছড়িয়ে পড়েছিল। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, ফিলিস্তিনিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং তুরস্কের ভূমিকম্প পীড়িতদের জন্য ত্রাণ পাঠানো তার উদার মানবিকতার স্বাক্ষর বহন করে।

সমাজে ইসলামি শিক্ষার প্রচার কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দ্বীনিয়া মাদরাসা ব্যবস্থা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তিনি কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ গঠন ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। 
বাংলাদেশে ২৫০০ এর বেশি, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় সম্মতি দিয়েছে সেখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা, ভারতে একের অধিক  মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে তিনি ইসলামি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেন।

তার রচিত বইগুলো আজও মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। মিলাদ শরিফ ও বারো চাঁন্দের ফজিলত, খুতবায়ে ছালেহিয়া, চল্লিশ হাদিস, খুতবায়ে ইফতেতাহিয়া, চারি তরিকার শাজরা এবং মুসলিম বাল্য শিক্ষা গ্রন্থগুলো ইসলামি জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
জীবনের শেষ দিনগুলোতেও তিনি দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ১০ মহরম, পবিত্র আশুরার রাতে ২:১১ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি দ্বীনী কাজে লিপ্ত ছিলেন। ইন্তেকালের আগে ভক্ত মুরিদানদের বিশেষ উপদেশ দিয়েছিলেন। তার জানাযায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল।
তার রেখে যাওয়া কাজগুলো আজও চলমান। দ্বীনিয়া মাদরাসাগুলোতে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করছে। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে হিজবুল্লাহ ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষা ও প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার শিক্ষা ও আদর্শ লক্ষাধিক মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছে।
♦♦পীর শাহ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর জীবন ছিল ইসলামের সত্যিকার খেদমতে নিবেদিত। তিনি শুধু একজন পীর বা আলেমই ছিলেন না, ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, মানবসেবক এবং আদর্শ নেতা।♦♦
তার জীবনী আমাদের শেখায় কিভাবে ইলম, আমল ও খেদমতের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবন গঠন করা যায়। তার সেই অমর বাণী আজও আমাদের প্রেরণা যোগায় আল্লাহর সন্তুষ্টিই হলো জীবনের প্রকৃত সাফল্য। তার জীবন ও কর্ম চিরকাল মুসলিম উম্মাহর জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবে। বাংলার মাটি ও মুসলিম বিশ্ব চিরদিন তার অবদানকে স্মরণ রাখবে।
লেখক :
মোঃ আমজাদ হোসাইন
কলামিস্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Categories