মসজিদে গাউসুল আজম থেকে মোঃ আবদুর রহমান :
আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব কেবলা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন (মা.জি.আ.) বলেছেন- একজন প্রকৃত মু’মিন বান্দার জন্য আত্মশুদ্ধি অর্জন করা অতীব জরুরী। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই, পোশাক ময়লা তথা নোংরা হয়ে গেলে সাবান দিয়ে ধৌত করে যেমনি ময়লা দূরীভুত করি। ঠিক তদ্রুপ অন্তরের রোগসমূহ, যথা- পাপ-পঙ্কিলতা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, ক্রোধ-অহংকার ইত্যাদি দ্বারা মানুষের অন্তরাত্মা কলুষিত হয়। এ সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ও আল্লাহর রহমত লাভ করার জন্য আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের সাহবত এখতিয়ার তথা আওলিয়ায় কেরামের সাহচর্য গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। তাঁরা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী বিভিন্ন আমলের প্রতি উৎসাহ দিয়ে সিরাতুল মুস্তাকীমের ওপর পরিচালিত করা সহ আল্লাহর রহমত লাভে সহযোগিতা করে থাকেন।
পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন- একটি প্রবাদ আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। সৎ সঙ্গ তথা সোহবতে সালেহীনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ হয়। যেমন মু’মিন বান্দগণের সঙ্গী হওয়ার কারণে আসহাবে কাহাফের হীন কুকুরটি পর্যন্ত জান্নাতী হয়েছিল। অপরদিকে অসৎ সঙ্গের সংস্পর্শে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন বিনষ্ট হয়ে যায়। হযরত নবী কারীম (সা.)-এর মাধ্যমে যেহেতু নবুওয়াত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না। দুনিয়া প্রলয় হওয়া পর্যন্ত আখেরী নবীর যামানা। এ সময়ে শেষ নবীর ওয়ারিশগণ-সিদ্দীকীন ও সালেহীন তথা-হক্কানী ওলামায়ে কেরামগণ নবীদের উত্তরাধীকারী হিসেবে হেদায়েত ও তাবলীগের দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হৃদয় নিয়ে আমাদেরকে হক্কানী রব্বানী আওলিয়ায়ে কেরাম ও পীর-মুরশিদের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। তবেই আমাদের ইহ-পরকালীন জীবন সার্থক ও সুন্দর হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকার মহাখালীস্থ ঐতিহ্যবাহী মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন ও ছারছীনা শরীফের মরহুম পীর ছাহেব কেবলা মুজাদ্দেদে যামান আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.) এর ঈছালে ছাওয়াব ও দোয়ার মাহফিলের প্রধান অতিথির আলোচনায় হযরত পীর ছাহেব কেবলা একথা আখেরী মুনাজাত পূর্ব বয়ানে বলেন।
মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু বকর মোহাম্মদ ছালেহ নেছারুল্লাহ, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর নায়েবে আমীর আল্লামা কবি রুহুল আমিন খান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, বাংলাদেশ দীনিয়া মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর নাযেমে আ’লা ড. সৈয়দ মুহা. শরাফত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফেজ মাওলানা মো. রুহুল আমিন, ঢাকা দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ. খ. ম. আবু বকর সিদ্দীক, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর অতিরিক্ত নাযেমে আ’লা মাওলানা মো. আলী আকবর, ইউনাইটেড ঢাকা জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সভাপতি সাবেক জেলা জজ আলহাজ্ব মো. ইসমাঈল হোসেন, ছারছীনা দারুস্সুন্নাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ রূহুল আমীন আফসারী, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মো. হেমায়েত বিন তৈয়্যেব, বাংলাদেশ যুব হিযবুল্লাহর সভাপতি মাওলানা কাজী মো. মফিজ উদ্দিন, হযরত পীর ছাহেব কেবলার সফরসঙ্গী মাওলানা মো. মোহেব্বুল্লাহ আল মাহমুদ, মাওলানা বায়জিদ হোসাইন ছালেহ প্রমূখ। অনুণ্ঠানটির সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর ইউনাইটেড ঢাকার নের্তৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু জা’ফর মো. সাদেক হাসান।
পরিশেষে হযরত পীর ছাহেব কেবলার দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা সহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত, আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং উপস্থিত জনতার সার্বিক কল্যান ও মুর্দেগানের নাজাত কামনায় মুনাজাতান্তে মাহফিল শেষ হয়।