আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতের গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির শাসন ভারতের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমগুলিকে স্তব্ধ করে চলেছে এবং ভিন্নমতকে দমন করার জন্য আইনী ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির কুখ্যাত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রাজনৈতিক নেতাদেও বিরুদ্ধে তদন্ত ৪শ’ শতাংশ বাড়িয়েছে, যাদের লক্ষ্য ৯৫ শতাংশ বিরোধীদের দমন করা। এবং এই সবই হয়েছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, যা সংখ্যালঘুদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। নৈতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি না জানার কোনও সুযোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নেতাদের নেই। তারপরেও ক্যানবেরা থেকে প্যারিস পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য সমাদৃত ও প্রশংসিত হচ্ছেন মোদি। তার জন্য লাল গালিচা বিছানো হচ্ছে। ‘ফ্রিডম হাউস’ এবং ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ বলছে যে, ভারতে আর সম্পূর্ণ গণতন্ত্র নেই। কিন্তু মোদির স্বৈরশাসন নিয়ে নিশ্চুপ বাইডেন এবং পশ্চিমা নেতারা।
মোদিকে আজ একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক বা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোয়াইট হাউসে একটি রাজকীয় নৈশভোজে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কিন্তু, নিপীড়নের দিকে ভারতের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বা ভারতের এই লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ ৩শ’ শতাংশ বেড়েছে এবং ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন দেশটির ২০ কোটি মুসলিমদের একটি বড় শতাংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এবং অক্সফাম থেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার এনজিও ও প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী তহবিল পেতে বাধা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম অবমাননা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মার্চে ভারতের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম’ সূচকে দেশটি এখন ১শ’৬১তম স্থানে রয়েছে।
ভারতে ভোটার এ্ং বাকি বিশে^র নজর ঘুরিয়ে রাখার জন্য ভারতের দমন-পীড়নের খবরগুলি সাবধানে লুকিয়ে রাখা হয়ে থাকে। বিজেপির সবচেয়ে বেশি ভয় হল, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা, যা ভারতীয় জনগণের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। এইভাবে মোদি এবং তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি বিজেপির অমিত শাহ বা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো চরমপন্থী নেতারা ভারতকে হয়তো আরও অন্ধকারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে পশ্চিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, যা এখন গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে সংগ্রাম করছে। যেকোনও টেকসই জোটের জন্য একটি অভিন্ন মূল্যবোধের প্রয়োজন। তাই স্বৈরাচারী ভারত কথিত স্বৈরাচারী চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা তার পশ্চিমা মিত্রদের সহসাই কোনও সাফল্য এনে দিতে পারবে না। বাইডেন বলেছেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি উপলব্ধ করার একক সর্বোত্তম উপায়।’ তিনি এবং গণতন্ত্রের আরও অনেক প্রভাবশালী সমর্থক জানেন যে ভারতের গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে, তাই তাদের জোড়ালোভাবে এবং স্পষ্ট কওে এটি বলার এখনই সময়।