স্টাফ রিপোর্টার :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাতের আঁধারে কাঁচপুর সেতুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে ফেলেছে, ভেঙে ফেলেছে- এরা কারা? এরা আগুন সন্ত্রাস। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান। রাজনীতি রাজনৈতিকভাবে আমরা মোকাবিলা করব। যদি খেলার নিয়ম ভাঙেন, তাহলে খবর আছে।
রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বিএনপি-জামায়াত ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে’ এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়নকারীদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে। খেলা হবে নির্বাচনের, খেলা হবে আগামী ডিসেম্বরে।
তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুল, বড় বড় কথা বলছেন। মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান লন্ডনে গেছেন। বিএনপি স্বাধীনতা শত্রু। বিজয়ের মাসে প্রস্তুত হয়ে যান। আজ আমাদের গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র বিএনপি গিলে খেয়েছে। আইনের শাসন গিলে খেয়েছে, আবার ক্ষমতা এলে বিএনপি বাংলাদেশ গিলে খাবে। খেলা হবে। খেলা মানে পাল্টাপাল্টি না। খেলা মানে মারামারি নয়। আগুন নিয়ে আসলে, আগুন নিয়ে খেলতে চাইলে খেলা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করে। ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। কিছু কিছু মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা বিএনপির সমাবেশ দেখে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির কিছু লোকজন দেখে এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। আজকে উত্তরার সমাবেশ দেখে যান। বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলে, উপজেলায় আওয়ামী লীগ এই ধরনের সমাবেশ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আজকে গোটা জাতিকে আমরা জানাতে চাই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। ষড়যন্ত্র করে, ধমক দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে বসে প্রতিদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা আজ কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলছে, ১০ ডিসেম্বরের পরে নাকি খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে! সেটা মিথ্যা প্রমাণ করতে, তাদের জানান দিতে ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগের লোকজন একত্রিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেই ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমেছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় প্রতিটি আসনে যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেগে উঠে তারা ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনেও দাঁড়ানো তো দূরের কথা, পালানোর পথ পাবে না।
এদিকে, বেলা তিনটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকেই উত্তরার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থানা ও ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে থাকেন। নানা রঙের টুপি, টি-শার্ট পরে বাদ্য-বাজনার তালে তালে হাত তালি দিয়ে মিছিল-স্লোগান দিতে দিতে তারা সমাবেশে যোগ দেন। বেলা আড়াইটার আগেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জসীমউদ্দীন, আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, হাউজ বিল্ডিং বাসস্ট্যান্ড এলাকা নেতাকর্মীদের মিছিল স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। অনেক নেতাকর্মী আবার ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রিয় দলের জার্সি ও পতাকা নিয়েও সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন।
উত্তরা ৫ ও ৭ নম্বর সেক্টরের মাঝে থাকা লেকের পাড়ে সড়কের ওপর দুটি ট্রাক পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে মঞ্চ করা হয়। মঞ্চের সামনে-পেছনে দু’পাশেই যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সমাবেশের কারণে সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর মোড় থেকে হাউজ বিল্ডিং বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া মিছিলের কারণে আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আবদুল্লাপুর সড়কেও ছিল তীব্র যানজট। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ। সমাবেশের সার্বিক সহযোগিতা করেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা ও দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি প্রমুখ।