স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেছেন, ‘এটা হত্যাকাণ্ড। আমার ছেলেকে ফিরে পাব না। কিন্তু হত্যা যারা জড়িত তাদের বিচার চাই।’ আজ মঙ্গলবার বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহত পরশের জানাজা নামাজ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা শুধু জানতে চাই তাঁর সঙ্গে কি হয়েছে। তাকে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। আমাদের দাবি আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’
হত্যাকাণ্ড মনে হওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরশের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেটা লেখাপড়ায় অনেক মেধাবী ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি ডিবেটিং করত, গবেষণার কাজে ছিল, জার্মানিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কে বুয়েটের হয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তাঁর পাসপোর্ট করা হয়েছে। ভিসা হয়ে গেছে ৷ এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটে গেল। আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। বিচারটা চাই।’
পরশের বাবা বলেন, ‘এটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া কিছুই বলার নেই। কারণ তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্ন আছে। তার পকেটে মোবাইল, মানিব্যাগ, হাত ঘড়িসহ সব ছিল। কিছুই নেওয়া হয়নি। সব পাওয়া গেছে। আমার কোনো শত্রু আছে বলে মনে করি না। আমি কারও ক্ষতি করিনি। তাঁর সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব ছিল না। এরপরও যদি কিছু পেতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে ডিজিটাল বাংলাদেশে তার মুভমেন্ট জানতে চাই। ডিজিটালের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। আমার জানা কিছু ছিলও না।’
কাজী নুর উদ্দিন রানা আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছে। তাঁর মাকে পরীক্ষার জন্য গ্রুপ স্টাডি করার কথা বলে বের হয়েছে। পরীক্ষা শেষে শনিবার দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়ার কথা ছিল। সেই ছেলে আর ফিরে আসল না। আমরা বিচার চাই।’
নিহতের বড় চাচা কেএম মহিউদ্দিন বাবু, বাসা থেকে রামপুরায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা বলে ছিল। পরের দিন তার পরীক্ষা ছিল। কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি জানানো হয়। তখন ৫ তারিখ রাত ১১টার দিকে পরিবার রামপুরা থানায় গিয়ে জিডি করে। রাত ১০টা পর্যন্ত তার মোবাইল চালু ছিল।
পরিবারের পক্ষ থেকে কারও প্রতি সন্দেহ আছে কি না জানতে চাইলে কেএম মহিউদ্দিন বাবু বলেন, ‘সন্দেহ নেই কারও প্রতি। আমাদের জানা মতে তাঁর সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। পরিবারের বড় সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আগামী মাসে জার্মান যাওয়ার কথা ছিল। আমরা এই হত্যার পেছনে জড়িতদের বিচার চাই। তাঁর সঙ্গে কি হয়েছে এটা তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাই। আমার ভাতিজা শুধু পরিবারের না, দেশের সম্পদ। সে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তাঁর হত্যার বিচার চাই।’
বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছে নিহত পরশের সহপাঠীরা। এটিকে তারা হত্যাকাণ্ড মনে করছে। তাই এই হত্যায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ দিকে জানাজা শেষে পরশের মরদেহ ডেমরায় তাঁর সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সালাউদ্দিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।