মালয়েশিয়া থেকে ফিরে নতুন ঘর তৈরি করছিলেন নেজাম উদ্দিন। ঘরের কাজ প্রায় শেষের পথে। সাপ্তাহখানেকের মধ্যে সে ঘরে উঠার কথা তার। কিন্তু নতুন ঘরে ঘুমানোর সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলো ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়ের মধ্যে স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী ও পাঁচ বছরের শিশুসন্তান নুসরাত আক্তার লিজাকে নিয়ে একসাথে ঘুমিয়ে পড়েন খাটে। এর মধ্যে ঘরের পাশে পুকুর পাড়ে থাকা বিশাল রেইন ট্রি এক গাছ পড়ে তিন জনের বুকের উপর। স্থানীয় লোকজন করাত দিয়ে গাছ কেটে তাদের তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখালের খামারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নেজাম উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন জানান, মাত্র এক মাস আগেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন নেজাম উদ্দিন। স্ত্রী কণ্যাকে নতুন ঘরে তুলে দিয়ে আগামী মাসেই আবার ফিরে যাবার কথা ছিলো তার। সোমবার রাতে ঝড় শুরু হওয়ায় নাজিম দ্রুত বাড়ি ফিরে স্ত্রী কন্যার সাথে ঘুমিয়েছিলেন। আচমকা ঘরের পাশের বিশাল গাছটি উপড়ে পরে চাপা দেয় ঘরটিকে। এতে তারা তিনজনই মারা যান।
হেসাখাল ইউপি চেয়ারম্যান ইকবার বাহার মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার স্বচ্ছল এই পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই। তিনি জানান, ঝড়ে তিনজনের মৃত্যু ছাড়াও সিত্রাংয়ের প্রভাবে নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত কুমিল্লা অতিক্রম করা কালে এই ঘূর্ণিঝড় ক্ষয়ক্ষতি করেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও স্থাপনার।
নেজাম উদ্দিনের শ^াশুড়ি মর্জিনা বেগম জানান, ঝড় শুরু হওয়ায় নেজাম উদ্দিন দ্রুত বাড়ি ফিরে স্ত্রী কন্যার সাথে ঘুমিয়েছিলেন। আচমকা ঘরের পাশের বিশাল গাছটি উপড়ে পরে চাপা দেয় ঘরটিকে। মৃত্যু হয় তাদের। মাত্র এক মাস আগেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন নাজিম। স্ত্রী কণ্যাকে নতুন ঘরে তুলে দিয়ে আগামী মাসেই আবার ফিরে যাবার কথা ছিলো তার।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল এলাকায় ঝড়ে গাছ পড়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের মাতম বইছে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠেছে সেখানকার পরিবেশ। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে হেসাখাল গ্রামের খামার পাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে বিহ্বল স্বজনেরা বারবার মোর্ছা যাচ্ছেন। তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষজন ছুটে আসছেন নিজাম উদ্দিনের বাড়িতে। স্বজনদের কান্নায় তাদের চোখও ছলছল করে ওঠে।