ইসলামী ডেস্ক :
আক্বীদা শব্দটি আরবী একবচন। এর বহুবচনে আকায়েদ ব্যবহৃত হয়। এর শাব্দিক অর্থ — মতবাদ, বিশ্বাস, মতাদর্শ ইত্যাদি। মূলত ধর্মের ব্যাপারে ব্যক্তির অন্তরের একান্ত ধারণা ও বিশ্বাসকে বলা হয় আক্বীদা। ঈমানের পরেই আক্বীদার স্থান। একজন মুসলমানের জীবনে আক্বীদার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ঈমান নির্ভর করে আক্বীদার ওপর। আক্বীদার ওপর নির্ভর করে ব্যক্তি ঈমানদার হয় আবার আক্বীদার কারণেই সে বে—ঈমান হয়। আক্বীদার কারনেই মানুষ সৎ পথ প্রাপ্ত হয় এবং আক্বীদার কারনেই হয় পথভ্রষ্ট জাহান্নামী। এজন্য আক্বীদাকে বলা হয় ঈমানের বেড়া বা ঈমান সংরক্ষনকারী।
আমলের প্রতিদান নির্ভর করে সঠিক আক্বীদার উপরে। বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষনকারী যেমনিভাবে অল্প আমলে অনেক বরকত লাভ করতে পারে, পক্ষান্তরে বদ আক্বীদার কারনে রাশি রাশি নেক আমলও বরবাদ হয়ে যায়। এজন্য আক্বীদাকে ছোট করে দেখা বা তুচ্ছ করা অথবা ব্যক্তিগত আক্বীদার ক্ষেত্রে উদাসীন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ দুনিয়ার বুকে একমাত্র সঠিক মতাদর্শ বা আক্বীদা হল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা বা মতাদর্শ। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা পোষন কারীগণ বা অনুসারীগণ পরকালে জান্নাতী হবে। বাকী সকল মতবাদের লোকেরা হবে জাহান্নামী।
সহীহ তিরমিযি শরীফে বর্ণিত আছে—
» হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন— হযরত রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন— “বনী ঈসরাইলে যা হয়েছিল আমার উম্মতের অবস্থাও ঠিক অনুরূপ তাই হবে। যেমনিভাবে এক পায়ের জুতা অন্য পায়ের জুতার সমান হয় এমনকি যদি তাদের মধ্যে কেউ নিজের মায়ের সাথে প্রকাশ্যে ভ্যাবিচারে লিপ্ত হয় তবে আমার উম্মতের মধ্যে সেরূপ লোক হবে।«
এছাড়াও বনী ইসরাইল (আক্বীদাগত ভাবে) বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। আর তাদের একটি দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল সেটি কোন দল? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমিও আমার সাহাবীগণ যে দলে আছি, যারা সে দলে অবিচল থাকবে।”
আলোচ্য হাদিস শরীফে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তাহল উম্মতে মুহাম্মাদী ৭৩ দলে যারা বিভক্ত হবে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহ পাককে স্বীকার করবে ইসলাম পালন করবে এবং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের দাবীদার হবে। কিন্তু তারা ৭৩ দলে বিভক্ত হবে শুধু মাত্র তাদের আক্বীদার বিচারে, আমলের বিচারে নয়, কারন আমলের দিক দিয়ে তারা হবে অসংখ্য ভাগে বিভক্ত যেমন কেউ নামাজ পড়ে কেউ পড়েনা। কেউ রোযা রাখে কেউ রোযা রাখে না। কেউ জিকির করে কেউ জিকির করেনা। এভাবে অসংখ্য প্রকার। কেবল আক্বীদার কারনে এই ৭৩ দলের মধ্য থেকে ৭২ দল জাহান্নামী হবে। এই ৭২টি দল মূলত ৭টি দল থেকে হবে।
এই মূল ৭টি দল হল—
১. মুতাজেলা— এদলটি ২০ টি শাখায় বিভক্ত
২. শীয়া -এরা ২২টি শাখায় বিভক্ত
৩. খারেজী -এদলটির শাখা ২০টি
৪. মুরজিয়া- এরা ৫টি শাখা,
৫. নাজ্জারিয়া -এরা ৩টি শাখায় বিভক্ত
৬. জাবরিয়া- এবং
৭. মুশাব্বিহা।
এই সমস্ত দলগুলো তাদের ভ্রান্ত মতবাদের জন্য হাদীসের ভাষা মোতাবেক জাহান্নামী হয়েছে আর একটি মাত্র হক দল বা নাজাত প্রাপ্ত দল তা হল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। যারা আল্লাহর রাসূল ও সাহাবীদের হুবহু অনুসারী এবং তাদের সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষনকারী। একমাত্র তারাই জান্নাতী হবে।
একদা হযরত রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকগুলো বক্র রেখা টানলেন এবং একটি সরলরেখা টেনে বললেন এই সমস্ত রেখার প্রত্যেকটিতে শয়তান বসে আছে এবং একটি পথই সীরাতুল মুস্তাকীম বা সরল সঠিক পথ। মানুষের যাবতীয় নেক আমলের প্রতিদান নির্ভর করে তার আক্বীদার উপর। খারাপ আক্বীদা পোষনকারী বাহ্যত যত পরহেজগার বা বুজুর্গ ইউক না কেন কুরআনের কথা মুখে মুখে যতই বলুক না কেন তাদের এই আমল কোন কাজে আসবেনা। ইতিহাস এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে— হযরত আলী (রা.) কে যারা শহীদ করেছে, কারবালার হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়াছে, ইমাম আযমকে যারা বিষ পানে হত্যা করেছে তারাই সবাই আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলমান ছিলেন। কিন্তু তাদের আক্বীদা এত খারাপ ছিল যার কারনে এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড করতেও কোন দ্বিধা করেনি।
এ উদাহরণ পেশ করার উদ্দেশ্য হল আমল দ্বারা ঈমানের পরিচয় হয় না বরং আক্বীদা দ্বারা ঈমানের পরিচয় ঘটে। এজন্য সাহাবায় কেরাম থেকে শুরু করে যুগে যুগে সত্য পন্থি আউলিয়ায় কেরাম আক্বীদার বেলায় ছিলেন আপোষহীন, নীতির প্রশ্নে ছিলেন অটল। ক্ষমতার মোহ, দলীয় স্বার্থ, জাতীয় ঐক্য সকল কিছুর উর্ধ্বে থাকতে হবে আমাদের আক্বীদার প্রশ্ন। আক্বীদাকে বিশুদ্ধ ও সঠিক রেখে আমাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এটাই আউলিয়ায় কেরামের শিক্ষা তারা জীবনভর আক্বীদার বেলায় বিন্দুমাত্র ছাড় বা শিথিলতা কখনো প্রদর্শন করেননি।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে আক্বীদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে হক আক্বীদার উপর আমাদের প্রতিষ্ঠিত থাকার তৌফিক দিন ,আমীন।