মোঃ আবদুর রহমান মহাখালী থেকে :
বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমীর ঐতিহ্যবাহী ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মাদ মোহেব্বুল্লাহ গতকাল ইফতার পূর্ব বয়ানে বলেন- ইসলামের সকল বিধি-বিধানের মধ্যেই আধ্যাত্মিকতা ভরপুর। আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনই সকল ইবাদতের মূল লক্ষ্য। একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার মাধ্যমে যিনি যতটুকু আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা লাভে সামর্থ হন তিনি ততটুকু সফলকাম হয়ে থাকেন। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা এ অধ্যাত্মিকতা লাভের অন্যতম মাধ্যম। কেননা সিয়ামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহর স্মরণ অন্তরে সার্বক্ষণিক ভাবে জাগ্রত রাখা। বলা বাহুল্য আউলিয়ায়ে কেরাম তাদের বাতানো তরীকা তাসাউফের মাধ্যমে এ আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের পথই সুগম করে থাকেন। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা এ ব্রতকে আরো একধাপ অগ্রসর করবে তাতে সন্দেহ নেই। হযরত পীর ছাহেব কেবলা রোজার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, একজন রোজাদার আল্লাহর হুকুমে আল্লাহকে ভয় করে নিয়ত করে যে, সে রোজার নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে তার বৈধ উপায়ে উপার্জিত খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সম্ভোগ হতে নিজেকে বিরত রাখবে। এরুপ সিয়াম পালন মূলত: রোজাদারকে হারাম উপাজন, গ্রহন ও ভক্ষণ পরিহার করতে অত্মিক শক্তি যোগায়। সে সর্বান্তকরণে ধ্যান ও জ্ঞান করে যে, সে দুনিয়ার সকল চক্ষুর অন্তরালে গিয়ে কোন কাজ করতে সক্ষম হলেও কোন ক্রমেই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দৃষ্টির বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। বান্দা নিজের উপলব্ধি থেকেই অন্যায় কাজ পরিহার করতে এবং ভাল কাজ করতে অগ্রণী হয়। এভাবেই সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জিত হয়। আর তাকওয়ার ক্ষেত্রে যিনি যত উৎকর্ষতা লাভ করেন তিনি তত আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা রুপে পরিগণিত হন। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান ‘ইন্না আকরামাকুল ইনদাল্লাহি আতকাকুম’ তোমাদের মধ্যে অধিকতর খোদাভীরুগণই অধিক সম্মানের অধিকারী।
হযরত পীর ছাহেব কেবলা উপস্থিত জনতাকে আমলের প্রতি উৎসাহ দিয়ে বলেন-মাহে রমজানের প্রতিটি মূহুর্ত মু’মিন মুসলামানের জন্য মূল্যবান। এ সময় সিয়াম, কিয়াম, সাদাকাহ্, ইফতার, জিকির-আজকার, মুরাকাবা-মুশাহাদা ও ই’তেকাফের মাধ্যমে কাটাতে হবে। তিনি সকলকে মাহে রমজানের মাগফিরাতের অংশে ইফতারের পূর্বে দোয়া কবুলের সময়ে তওবা করিয়ে আমলী জিন্দেগী গঠনের উপর বাইয়াত গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ ইউনাইটেড ঢাকার উদ্যোগে ঢাকার মহাখালীর মসজিদে গাউছুল আজমে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছারছীনার হযরত পীর ছাহেব কেবলা একথা বলেন।
হযরত পীর ছাহেব কেবলার আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ. এম. এম. বাহাউদ্দীন, মহাসচিব প্রিন্সিপাল শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, সিনিয়ার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফেজ মাওলানা মো. রুহুল আমিন, ইউনাইটেড ঢাকার জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সভাপতি সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আলহাজ্ব মৌ. মো. ইসমাইল মিঞা সহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরেরনেতা-কর্মী ও পীর ভাইদের পাশাপাশি সাধারণ মুসুল্লিদের পদভারে পুরো মসজিদের গাউছুল আজম কমপ্লেক্স ভরপুর হয়ে যায়। সকলকে নিয়ে হযরত পীর ছাহেব কেবলা ইফতারের পূর্বে অশ্রুসিক্ত নয়নে মুনাজাতে বিগত জীবনের গোনাহরাশি ক্ষমা চেয়ে রোনাজারী করেন। মুনাজাতে তিনি দেশের শান্তি-শৃংখলা, উন্নতি-অগ্রগতি ও বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ কামনা করেন।