ছারছীনা থেকে মোঃ আবদুর রহমান :
আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মাা.জি.আ.) বলেছেন-
আল্লাহ পাক কিয়ামত দিবসে মানুষকে তার অন্ত:করণের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। জাহেরী সৌন্দর্য ও আকৃতি ও পদ মর্যাদার প্রতি তিনি কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ করবেন না। তিনি বলেন- নিজের আমলী জিন্দেগী গঠন করে পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করার ক্ষেত্রে আমাদের তরীকা মশকের কোন বিকল্প নেই। আর তরীকা মানুষকে ‘আদব’ শিক্ষা দেয়। কেননা মনীষী জুনাইদ বাগদাদী (রহ.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন- ‘আত্ তরীকু কুল্লুহু আদব’ তরীকার সর্বাংশই আদবের মধ্যে। তাই আমাদিগকে আখলাকী মুসলমান হতে হবে। ইসলামের প্রথম যুগে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের আখলাক ও আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই অমুসলিমরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন ‘আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আপনি তাদের প্রতি কোমল ব্যবহার করেছেন। পক্ষান্তরে যদি আপনি রূঢ় আচরণকারী এবং কঠিন অন্ত:করণের অধিকারী হতেন তাহলে তারা আপনার নিকট হতে দূরে সরে যেত।’ একথা সত:সিদ্ধ যে, ইসলামের প্রসার ঘটেছে মুসলমানদের উদারতার দ্বারা তরবারী বা জোর-জবরদস্তীর মাধ্যমে নয়।
হযরত পীর ছাহেব কেবলা আরো বলেন-
ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর কুতবুল আলম শাহসূফী হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) দেশের মুসলমানদিগকে আকীদা, আমল ও আখলাকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই অত্র দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য যা কিছু প্রয়োজন ছিল তিনি তার সব কিছুই করার প্রায়স পেয়েছিলেন। তিনি ছারছীনা শরীফে এখানে টাইটেল মাদরাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ, হেমায়েতে ইসলাম, এহইয়ায়ে সুন্নাত বোর্ড এবং দীনী কিতাবের প্রকাশনা সংস্থা মুসলিম ষ্টোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই মাদরাসা, মকতব, খানকাহ, মসজিদ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতেন। যার ফলশ্রুতিতে দেশে ইসলামী পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মুসলমানরা তাদের নামে পূর্বে শ্রী মুছে মুহাম্মদ যুক্ত করেন, ধুতি বাদ দিয়ে লুঙ্গি পরতে আরম্ভ করেন, মাথার টিকি কেঁটে টুপি পরেন, শির্ক-বিদয়াত ছেড়ে মসজিদে গিয়ে নিয়মিত জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করতে থাকেন। এছাড়াও জিকির-আজকার ও নিয়মিত অজীফা আদায়ের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করে আল্লাহর ওলী তথা পিয়ারা বান্দা হয়ে আখেরাতের অনন্ত জীবনের সফলতা নিশ্চিত করে অনেকেই স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন। হযরত পীর ছাহেব কেবলা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ আমলী জিন্দেগী গঠনের পরামর্শ দেন। অত:পর মুনাজাতে মাহফিলের কামিয়াবী সহ ও বিশ^ মুসলিমের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান কামনা করেন।
মাহফিলের ১ম দিন গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব তা’লীম পরবর্তী বয়ানে ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব কেবলা একথা বলেন। দিন ও রাত ব্যাপী ওয়াজ-বক্তৃতায় অংশ গ্রহণ করেন মাওলানা মোঃ ছফীউল্লাহ আল মামুন, মাওলানা আ.জ.ম. ওবায়দুল্লাহ্, মরহুম পীর ছাহেব কেবলা সফর সঙ্গী মাওলানা আবু জা’ফর মোঃ শামসুদ্দোহা, মাওলানা আবু জা’ফর মোঃ অহিদুল আলম, মাওলানা কাজী মোঃ মফিজ উদ্দিন, হযরত পীর ছাহেব কেবলার ছোট ছাহেবজাদা হাফেজ মাওলানা শাহ্ আবু বকর মোহাম্মাদ ছালেহ নেছারুল্লাহ্, মাওলানা মাহমুদুল মুনীর হামীম এবং হযরত পীর ছাহেব কেবলার সফরসঙ্গী মাওলানা মো. মুহিব্বুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমূখ।
আজ মাহফিলের ২য় দিন। আগামীকাল বাদ জোহর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সার্বিক কল্যাণ কামনা করে হযরত পীর ছাহেব কেবলা আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন।