সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের সহযোগিতায় ১০ বছর পর পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেলো সেই মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। চিকিৎসা শেষে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় এ্যাসিল্যান্ড অফিসে ওই নারীর ছেলের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়। এসময় সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) লিখন বনিক, চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন, ফেনী প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসাইন মামুন, পৌর কাউন্সিলর আইয়ূব আলী খান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র সভাপতি মঞ্জিলা মিমি, সাধারণ সম্পাদক জুলহাস তালুকদার ও উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন রিপন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ওই নারীর নাম সুফিয়া বেগম (৪০)। সে নরসিংদি জেলার মাধবদি উপজেলার গোপালদি গ্রামের এবাদিল মেম্বার বাড়ির মো. আলমের স্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার গ্রামের বদনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর কন্যা। সে দুই পুত্র সন্তানের জননী। তার স্বামী মো. আলম পেশায় একজন রিক্সা চালক। তার বড় ছেলে মো. শাওন জানান, পারিবারিক কলহের জেরে দশ বছর পূর্বে তার পিতা ও দাদি তাদের দুই ভাইকে রেখে তার মা সুফিয়া বেগমকে কে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তখন তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভবঘুরে হয়ে যান। দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ দুই সন্তান তার মায়ের জন্য প্রতিক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান পাননি মায়ের। ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মায়ের ছবি দেখে তার খালা রাবেয়া খাতুন তার মায়ের ছবি সনাক্ত করেন। তার খালার মাধ্যমে জানতে পেরে সে তার মায়ের ছবি সনাক্ত করে।
সূত্র জানায়, মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী দীর্ঘ দিন যাবৎ সোনাগাজী পৌর এলাকায় ভবঘুরে হিসেবে থাকত। তার বিবস্ত্র চলাফেরায় নারী-পুরুষরা চরম বিব্রতবোধ করত। কেউ কেউ মাঝে মধ্যে তাকে বস্ত্র পরিধান করিয়ে দিলেও কিছু সময় পর তা খুলে বিবস্ত্র অবস্থায় চলা ফেরা করত সে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছে। কিন্ত তখন পর্যন্ত ওই নারীর কোন পরিচয় পায়নি কেউ।
একইদিন সন্ধ্যায় মেয়র চিকিৎসার দায়ীত্ব নিয়ে
ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র মাধ্যমে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান এবং নতুন বস্ত্র কিনে দেন। তার যথাযথ চিকিৎসার জন্য সহায়কে তিনি আর্থিক অনুদানও প্রদান করেন।
প্রাথমিকভাবে ওই নারী জানায়, তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। বাড়িতে তার মা, বোন ও ভাই রয়েছে। এছাড়া আর কোন ঠিকানা সে বলতে পারেনি সে।
ভবঘুরে ওই নারীর চিকিৎসার দায়ীত্ব নেয়ার সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি সনাক্ত করে তার বড় ছেলে শাওন হোমনা থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হোমনা থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ ওই নারীর ছেলেকে সোনাগাজী পাঠান। তার ছেলে মায়ের ভরণপোষণ বহন করবে মর্মে এ্যাসিল্যান্ডের কাছে একটি অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষ করে তার মাকে বুঝে নেন। এসময় মেয়র খোকন আরো চিকিৎসার জন্য অর্থিক অনুদান প্রদান করেন এবং পরিবারটির পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, ওই নারী সাড়ে চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
সহায়’র সভাপতি মঞ্জিলা মিমি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কিছুটা সুস্থ্য হয়ে ওই নারী তাকে বলেছে, ভবঘুরে থাকা অবস্থায় একাধিক লোক রাতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো এবং ধর্ষণ করতো। তাই সে নিজে জেদ করে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘুরতো। ইমোতে বোন রাবেয়া ও মায়ের ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয় ওঠেন সুফিয়া। তার ১৬ বছর বয়সী বড় ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে কর্মরত এবং ১৪ বছর বয়সী ছোট ছেলে আরমান গ্রামের বাড়িতে রিক্সা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছে। সুফিয়াকে তাড়িয়ে রিক্সাচালক স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করে সংসার গড়েছেন।