স্টাফ রিপোর্টার :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বংশানুক্রমে চাকরিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সেই সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছ থেকে তাদের জন্য নির্মিতব্য ফ্ল্যাটের ভাড়া না নিয়ে শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের এই নিয়মিত বৈঠক হয়। সরকারি বাসভবন গণ ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাতে সভাপতিত্ব করেন।
একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেন বংশানুক্রমে কাজ (চাকরি) পায়।
“এসময় বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনায় সম্মতি জানান।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি আরও ব্যখ্যা করতে গিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছ থেকে কত ভাড়া নেওয়া হবে সে বিষয়ে বৈঠকে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
“এরপর তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়া যাবে না। ওরা গরিব মানুষ, তাদের জন্য আমাদের সহায়তা দেওয়া দরকার। তবে (বাসা) সংরক্ষণ করার জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুই যেন নেওয়া হয়। খুব বেশি যেন নেওয়া না হয়।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আরো কয়েকটি নির্দেশনার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা এলসি স্টেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বৈঠকে উঠেছিল। সেই প্রকল্পের আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব স্থলবন্দরে স্ক্যান মেশিন বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
“প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, এসব স্থলবন্দরে মালপত্র স্ক্যান করা এবং বডি পর্যন্ত স্ক্যান করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।… বৈঠকে উপস্থিত এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, এই ব্যবস্থা এই প্রজেক্টে নাই। তবে রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে আলাদা একটা প্রজেক্ট এনে এই (স্ক্যানার) ব্যবস্থা করা হবে।”
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকার চার পাশের নদী তীরে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।
“বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী রক্ষার বিষয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, শিল্প ও বাড়ি ঘরের আবর্জনা নদীতে যাওয়ার আগে ওই ময়লা পরিশোধন করার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল ময়লা এক জায়গায় করে পরিশোধন করে তারপর পানিটা নদীতে ফেলতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ঢাকার চারপাশে একটি সার্কুলার ওয়ে করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, “নদী যাতে দূষণ না হয় সে বিষয়ে সকল সিটি কর্পোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশিদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমাদের নদীর তীরগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চলে যায়। যার কারণে নদীর নাব্যতায় ক্ষতি হয়। আমরা যদি সেখানে পিলার করে ওয়াকয়ে করে দিতে পারি, তাহলে নদীর ৩০-৪০ ফুট জায়গা বেঁচে যায়।
“এটা উনার (প্রধানমন্ত্রীর) অবজারবেশন। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ওয়াইজ ঘাট, সদর ঘাট, এসব এলাকাতেও প্রশস্ত রাস্তা নেই। সেখানেও যদি এরকম ওয়াকওয়ে করে দেওয়া যায়, তাহলে যানবাহন চলাচলে সুবিধা হবে।”
পৌর শহরে ফ্ল্যাট তৈরিতে ঢাকার চেয়ে কেন বেশি খরচ পড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে মামুন-আল-রশিদ বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবে ওই ফ্ল্যাটের আকার ৪৯৫ বর্গফুট বলা হলেও তাতে সবার চলাচলের জন্য খালি জায়গার হিসাব করা হয়নি। শুধুমাত্র ফ্ল্যাটের ভিতরের হিসাব করা হয়েছে।
“খালি জায়গা হিসাব করা হলে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আকার হয় ৭৪৯ বর্গফুট হয়। তখন প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ খরচ পড়ে ৪ হাজার ২৬০ টাকা। আর প্রশাসনিক খরচ বাদ দিয়ে ধরলে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ খরচ পড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা।”