স্টাফ রিপোর্টার :
পিরোজপুরের এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে গ্রাহকদের একাংশ।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের একটি অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে মাওলানা হারুনার রশীদ বলেন, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি রাগীব আহসান এলাকার মানুষের সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেন। জমা করা টাকার ওপর মাসিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে পাসবইসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিয়ে টাকা জমা নেন।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েক মাস মাসিক মুনাফা দেওয়ার পর বন্ধ করে দেন। এরপর নানা কথায় সময় পার করতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর টাকা-পয়সা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে রাতের আঁধারে শের-ই-বাংলা পাবলিক লাইব্রেরির চতুর্থ তলায় এহসান গ্রুপের প্রধান অফিস তালাবন্ধ করে দেয়। পরে জানা যায়, অফিস বন্ধের আগেই তারা অফিসের সব ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলেন।
হারুনার রশীদ বলেন, অফিস সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে পিরোজপুর এহসান গ্রুপের এমডি রাগীব আহসান গ্রাহদের পাওনা টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের প্রতারণায় পিরোজপুর ও আশপাশের লক্ষাধিক গ্রাহক ও মাঠকর্মী ক্ষতির শিকার।
তিনি বলেন, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড প্রতারণার উদ্দেশ্যেই আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে পরিচালিত হতো। ধীরে ধীরে তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাগীব আহসানের স্ত্রী সালমা বেগম চেয়ারম্যান, রাগীব আহসানের শ্বশুর মাওলানা শাহ আলম সহ-সভাপতি, রাগীব আহসানের বাবা আব্দুর রব খান উপদেষ্টা, রাগীব আহসানের বোনের স্বামী মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার, রাগীব আহসানের ভাই আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, আরেক ভাই মাহমুদুল হাসান প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও বাজার মসজিদের ইমাম, দুই ভাই শামিম খান ও খাইরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
মাওলানা হারুনার রশীদ বলেন, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের মাঠকর্মী আনুমানিক ১ হাজার ২০০ জন এবং সদস্য সংখ্যা এক লাখের বেশি। তারা দুই হাজার কোটি টাকা এবং পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, ঝালকাঠিসহ অন্যান্য জেলার লোকজন ব্যক্তি উদ্যোগে সরাসরি এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা জমা রাখেন।
এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতারণাকাণ্ডের বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানতেন বলেও অভিযোগ করেন মাওলানা হারুনার রশীদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান এক সভায় বক্তৃতাকালে এ প্রতিষ্ঠানের ১৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয় না করে রাগীব আহসান এবং তার আত্মীয়স্বজনের নামে জমি ক্রয় করেন। সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। এহসান গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬টিই উধাও হয়ে গেছে।