বরিশাল প্রতিনিধি :
গেল কয়েকদিন ধরেই বরিশালের পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে। আজ আবারও তা উত্তপ্ত হয়েছে উঠলো। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় এবার বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও মুনিবুর রহমান ও বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আলাদা দুইটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত আবেদন দুইটির ওপর শুনানি হয়নি। শুনানির পর জানা যাবে আদালত অভিযোগ দুইটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন কি না।
রবিবার (২২ আগস্ট) সকালে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন ইউএনও মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেটিতে ইউএনও ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নুরুল ইসলামসহ ৮ জনকে। এছাড়া আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইউএনওর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার। সেই অভিযোগে ইএনওর নাম উল্লেখসহ ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম খোকন এবং মো. বাবুলর করা মামলার আবেদনে ইউএনও মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিসিসির কাজে বাধাদান, বিনা উস্কানীতে বিসিসি’র কর্মচারীদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ প্রদান, হামলা, গুলিতে একাধিক ব্যাক্তির অঙ্গহানী এবং ৩০/৪০ জনকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাদীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে আদালতে উপস্থিত থাকা বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কাইয়ুম খান কায়সার জানান, আবেদনের শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক মাসুম বিল্লাহ সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য রেখেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত দেয়ার পর জানা যাবে যে মামলাটি গ্রহণ নাকি খারিজ করা হল।
এর আগে, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা এবং পরে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। মামলায় ৬০২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।
গত বুধবার ঘটনার দিন এবং পরদিন ১৩ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শনিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আরও আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দিন ওরফে কালুকে গতকাল শুক্রবার রাতে রুপাতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে বাধা দান ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আনসার সদস্যরা মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। পরে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা মেয়রকে উদ্ধার করে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ওপর হামলার খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা কমপ্লেক্সের গেটে উপস্থিত হন। এ সময় পুনরায় তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়।
এতে গুলিবিদ্ধ হন- বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ আরও ৩০/৪০ জন।