উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি :
সবুজের পটভূমিতে লালের অপরূপ সৌন্দর্য। বিলজুড়ে রঙিন শাপলার বর্ণাঢ্য উৎসব। তা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। লাল শাপলায় ঢেকে থাকা এই বিলের অবস্থান বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে। প্রায় ২০০ একরজুড়ে বিস্তৃত বিলটির নাম সাতলা।
নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার চেয়ে বেশী। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটা শুরু হয়ে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত বিল-ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় লাল শাপলা। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিদিন বরিশালসহ বিভিন্ন উপজেলার ভ্রমণপিসাসুরা স-পরিবারে ছুটে আসছেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য শাপলার বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার জন্য। শাপলার বিল ঘুরে দেখতে পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে নৌকার সু-ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা পর্যটকদের জন্য বিলের পাশে খাওয়ার ও সাময়িক ভাবে থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর শাপলার ফলন কমে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলের স্বল্প আয়ের মানুষেরা অভাবী সংসারে এক সময় শাপলাতেই জীবিকা নির্বাহ করার কথা শোনা যায়। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ।
উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সাতলা বর্তমানে একটি পর্যটকমুখী এলাকা হলেও এটি একটি বিলের নাম। বর্ষাকালে এটা সম্পূর্ণ ডুবে থাকে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রথম সাতলায় বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করেন। তারপর বিল থেকে বিশাল এলাকা উত্থিত হয়ে বর্তমানে মনোরম এলাকায় পরিণত হয়েছে সাতলা গ্রাম। এই বিলে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফোটে। ছোট নদী, হাওর ও বিলবেষ্টিত ছোট একটি গ্রাম সাতলা।
রোববার সকালে বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে এখানে ঘুরতে আসা ওবায়দুল ইসলাম উজ্জ্বল ও মোফাজ্জেল হোসেন ফরাজী জানান, সাতলার জলাশয়ে দেখা যায় নয়নাভিরাম লাল শাপলা। ওইসব লাল শাপলার বিলে ছুটে চলেছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।
বর্ষা কাল থেকে শরৎকালের শেষ ভাগ পর্যন্ত বিল এলাকায় মাইলের পর মাইল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে নয়নাভিরাম রক্ত শাপলা বা লাল শাপলা। শুধু উপজেলার সাতলা গ্রামই নয় দক্ষিণ পশ্চিম বারপাইকা,নাঘিরপাড়, কড়াইবাড়ি বিল কদমবাড়ি, চৌদ্দমেধা বিল, কুড়লিয়া, রামশীল, শুয়াগ্রাম সহ বিচ্ছিন্ন এলাকার জলাশয়ে লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।
বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম হলেও শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এখানে আসা পযর্টকদের ।
স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিক্রি কম করলেও স্বরূপকাঠির আটঘর, কুড়িয়ানা, ইন্দেরহাট, সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন বর্ষা মৌসুমে বড় বড় নৌকায় করে তাদের এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।
বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা, বেগুনী ও অন্যটি লাল রংয়ের। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।
বাণিজ্যিকভাবে শাপলার চাষাবাদ না হওয়ায় স্থানীয় কৃষি অফিসে এর কোন পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও স্থানীয়দের দাবি সাতলায় অন্তত ৬০ – ৭০ হেক্টর জমিতে শাপলা জন্মায়। তবে, স্থানীয় কৃষকরা আরও বেশী বলে জানিয়েছে।
প্রতিদিন বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ভ্রমণ পিপাসুরা স-পরিবারে ছুটে আসছেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য শাপলার বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার জন্য। শাপলার বিল ঘুরে দেখতে পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে নৌকার সু-ব্যবস্থা।
গত কয়েক বছর থেকে ভ্রমণপিপাসুরা সাতলা গ্রামকে লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে সাতলা নামের সাথে শাপলার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই স্থানীয়দের কাছে। বিলে ঠিক কতো বছর আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে তারও কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি কেউ। এই বিলে শুধু শাপলাই ফোটে না, শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায়, তখন এখানে কৃষকরা ধান চাষ করেন। সাধারণত আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর অনেক জমির মালিকেরা তাঁদের জমিতে থাকা শাপলার শালুক ও শাপলা গাছ বৃদ্ধির আগেই কেটে নষ্ট করে ফেলেছেন। কারণ, স্থানীয় একটি চক্র তাদের জমিতে নৌকা ভ্রমণের নামে হাজার হাজার টাকা আয় করে নিলেও তাদের ভাগ্যে কিছু জোটে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিলের সৌন্দর্য উপভোগের উপযুক্ত সময় ভোর থেকে সকাল ৯ টা এবং পড়ন্ত বিকেলে শাপলার রূপ-সৌন্দর্য বেশি। সূর্যের তেজ বাড়তে থাকলে শাপলা ফুলের পাপড়ি ছোট হয়ে যায়।
ভ্রমণপিপাসুরা দীর্ঘদিন থেকে সাতলা বিলকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন