চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে কবর খোড়ার লোকও পাওয়া যাবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। আজ সোমবার (১২ এপ্রিল ২০২১ইং) সকাল ১০টায় নগরীর এ.কে.খান মোড়, অলংকার মোড়, নিউ মার্কেট মোড় এবং রিয়াজউদ্দিন বাজারে গণপ্রচারণায় নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তিনি বলেন হঠাৎ করেই দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জীবন ও জীবিকাকে সমুন্নত রেখে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করছে সরকার।
তারপরও অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এক শ্রেণীর অবিবেচক মানুষের কারণে করোনাভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই আইসিইউ শয্যার জন্য ফোন আসছে। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরের সব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা পরিপূর্ণ। ফলে করোনা ছাড়া সাধারণ রোগীদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে অবশ্যই আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সাবান দিয়ে বারেবারে হাত ধৌত করতে হবে আর অবশ্যই মাস্ক পরিধাণ করতে হবে যার কোন বিকল্প নেই।
তিনি নগরীর মোড়গুলোতে বিভিন্ন গণপরিবহনে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী পরিবহন করতে দেখে চালক এবং যাত্রীদেরকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন একদিকে তারা অধিক হারে ভাড়া নিচ্ছে অন্যদিকে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যাত্রীদের মাঝে সচেতনতামূলক মাস্ক, সাবান এবং স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন তিনি।
এরপর নগরীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দামও পর্যবেক্ষণ করেন সুজন। এ সময় কয়েকজন ক্রেতা দ্রব্যমূল্যের অত্যধিক দাম আদায় করছেন বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বাজারে আগত ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন রমজান আসন্ন, সেই সাথে সরকার লকডাউনও ঘোষণা করছে। আর এটাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে এক শ্রেণীর অসাধু আমদানিকারক আর কতিপয় পাইকারি ব্যবসায়ী। আমরা দেখতে পাই রোজা, পুজা কিংবা কোন বড় ধরণের উৎসব আসলে ব্যবসায়িরা সাধারণ ভোক্তাসাধারণের গলা কাটে যা কোনভাবেই একজন ব্যবসায়ির ব্যবসায়িক লক্ষ্য হতে পারে না।
অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব উৎসবে ক্রেতাদের নিকট ন্যায্যমূল্যে কিংবা বিশেষ ছাড় প্রদান করে। অথচ আমাদের দেশে ঠিক এর উল্টো। দেশের ৬টি ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সিন্ডিকেট রোজাদারদের সাথে ব্যাপক দুশমনি শুরু করেছে। তারা রোজার পূর্বেই প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করে গুদামজাত করেছে অথচ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সাধারণ জনগনের পকেট কাটছে। তিনি বাজার মনিটরিংয়ের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে ঐসব সিন্ডিকেটের আমদানি মূল্য এবং বিক্রয় মূল্য তদারকি করার আহবান জানান।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের ক্রেতাসাধারণ। ক্রেতাসাধারণ যদি রমযানকে কেন্দ্র করে চারদিনের বেশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় না করে তাহলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তিনি জনসাধারণকে ঐসব সিন্ডিকেটকে সামাজিকভাবে বয়কট করারও আহবান জানান। বাজারে গণপ্রচারণার পাশাপাশি আগত ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝেও মাস্ক, সাবান এবং স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন সুজন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, কাউন্সিলর আব্দুস সালাম মাসুম, চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ মোজাফফর হোসেন, মোরশেদ আলম, বাগীশিক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. অঞ্জন কুমার দাশ, সাহেদ হোসেন খান, শিশির কান্তি বল, মো. বাবলু, সিরাজউদ্দৌল্লা নিপু, হারুনুর রশীদ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. ওয়াসিম, মঈনুল আলম জয়, মহিউল আলম হাজী প্রমূখ।