রাকিব আল হুসাইন (বরিশাল) :
আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি যে, তিনি নিজ মেহেরবানীতে আমাদেরকে শবে বরাতের মত একটি মোবারক রাত দান করে আমাদের জীবনকে ধন্য করেছেন। শবে বরাতের মত একটি রাত পাওয়া আল্লাহর বড় নিয়ামত। আমাদের প্রতি আল্লাহর আসংখ্য অগণিত নিয়ামত রয়েছে যা আমাদের পক্ষে গণনা করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না”। (সূরা ইবরাহীম – ৩৪)
শবে বরাত আমাদের জন্য খোদা প্রদত্ত এক বড় নিয়ামত। এজন্য মহান আল্লাহর বেশি করে শুকরিয়া আদায় করা দরকার।।
শবে বরাতের অন্যতম বেশিষ্ট্য হলো – এর শুরু এবং শেষ একই রকম। অর্থাৎ সারা বছর আল্লাহ তায়ালা রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে প্রথম আকাশে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন-
কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।
আর এ রাতের বেশিষ্ট্য হলো – এ রাতের সূর্যাস্তের সাথে সাথে তিনি প্রথম আসমানে আত্মপ্রকাশ করে ঘোষণা করতে থাকেন-
আছে কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। আছে কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, আমি তার রিযিকের ব্যাবস্থা করবো। আছে কোন বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। এভাবে অন্যান্য বিষয়ের ও প্রার্থনার আহবান জানান। এভাবে ফরজ পর্যন্ত বলতে থাকেন।সুতরাং শবে বরাতের রাতের প্রতিটি মূহুর্তই অত্যন্ত মূল্যবান। অন্য রাতের তাহাজ্জুদের সময় যেমন গুরুত্বপূর্ণ এ রাতের মাগরিব থেকেই সারারাত একই রকমের গুরুত্ব বহন করে। অতএব, এ রাত ঘুরাফেরা এর বাজে আড্ডায় সময় কাটাবার নয়, বরং ইবাদত – বন্দেগী, কান্নাকাটি, তাওবা ও ইস্তেগফারের রাত।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
” হা মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয় আমি এ কুরআনকে এক বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। আমি তো সতর্ককারী। (সূরা দুখান- ১-৩)
উক্ত আয়াতে ليلة مباركة বলে শবে বরাতেকে বুঝানো হয়েছে। এটাই হলো প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রহঃ) ও মুফাচ্ছিরীনদের এক জামা’আতের রায়।
তাফসীরে রূহুল আমীন,তাফসীরে জালালাইন,তাফসীরে মারেফুল কুরআন,বায়হাকী শরীফ,ইবনে মাজাহ শরীফ ও মিশকাত শরীফে শবে বরাতের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেছেন :
যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে , তখন সে রাতে তোমরা এবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। কেননা এরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার আকাশে আত্মপ্রকাশ করেন। অতঃপর বলেন আছে কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। আছে কোন জীবিকা প্রত্যাশী? আমি তার জীবিকার ব্যবস্থা করবো। আছে কোন বিপদগ্রস্থ? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করে দেবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ আহ্বান জারি থাকে। এ হাদীস থেকে বোঝা গেল, শবে বরাত জেগে থাকার রাত। ইবাদত বন্দেগীর রাত, আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া-পাওয়ার রাত। দুনিয়ার মানুষের কাছে চাইলে মানুষ নারাজ হয়।আমাদের জীবন উৎসর্গিত হোক সেই মহান আল্লাহর জন্য, তিনি বান্দার প্রতি কত মেহেরবান,যে যত বেশি চায় তার ওপর তিনি ততবেশি খুশি হয়। আর না চাইলে নারাজ।
* হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স:) এরশাদ করেছেন- একবার শাবানের ১৫ তারিখের রাতে জিব্রাইল (আ:) তাশরিফ আনলেন এবং বললেন, হে মোহাম্মদ! মাথা আসমানের দিকে উঠান। আমি মাথা উঠিয়ে আসমানের দিকে তাকালাম, দেখলাম জান্নাতের সকল দরজা খোলা। প্রথম দরজায় এক ফেরেস্তা দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিচ্ছে, সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যে এড়াতে রুকু করছে। দ্বিতীয় দরজায় আরেক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছে, সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে আজ রাতে সিজদা করছে। তৃতীয় দরজায় এক ফেরেশতা আওয়াজ দিচ্ছে, সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যে আজ রাতে দোয়া করছে। চতুর্থ দরজায় এক ফেরেস্তা আওয়াজ দিচ্ছে, সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যে আজ রাতে জিকির করছে। পঞ্চম দরজায় এক ফেরেস্তা ঘোষণা করছে, সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যে আজ রাতে খোদার ভয় রোনাজারি করছে। ষষ্ঠ দরজায় এক ফেরেশতা ঘোষণা করছে, সুসংবাদ আজ রাতে সমস্ত মুসলমানদের জন্য। সপ্তম দরজায় এক ফেরেশতা ঘোষণা করছে, যদি কারো কিছু চাওয়ার থাকে তবে সে যেন চায়, তার দরখাস্ত কবুল করা হবে। অষ্টম দরজায় ফেরেশতা ঘোষণা করছে, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? তাকে ক্ষমা করা হবে। রাসুল (স:) ইরশাদ করেন, আমি জিব্রাইল কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দরজাগুলো কতক্ষণ খোলা থাকবে? জিব্রাইল উত্তরে বললেন, শুরু রাত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। জিব্রাইল (আ:) আরো বললেন, হে মোহাম্মদ (স:) আজ রাতে আল্লাহতালা এত অধিক সংখ্যক লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন, যত সংখ্যক লোক কালব গোত্রের বকরির রয়েছে। (সুবহানাল্লাহ)
এ রাতে রাসুল (স:) থেকে তিনটি আমল প্রমাণিত রয়েছে।
১.কবর যিয়ারত করা।
২. রাত জেগে ইবাদত করা।
৩. পরের দিন রোজা রাখা।
আমাদের শবে বরাতের করণীয় হল, “কিয়ামুল লাইল” রাত্রি জাগরন করা, নফল নামাজ পড়া, কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা, তসবি তাহলীল, জিকির-আজকার, তওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহতে ক্ষমা চাওয়া, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে রাত কাটিয়ে দেয়া। কেননা, যতক্ষণ পর্যন্ত চোখের পানি না পড়বে , ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া কবুলের আশা করা যায় না।
রাসুল (স:) ইরশাদ করেছেন-
কাঁদো, যদি কাঁদতে না পারো তাহলে অন্তত কাদার ভান করো। কেননা চোখের পানির চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো জিনিস নেই। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী, জিকির-আজকার, রাত্রি জাগরন এবং আল্লাহর কাছে জিন্দেগীর গুনাহের জন্য রোনাজারি করার তাওফিক দান করুন।