নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি :
ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। দিনরাত সমানতালে প্রার্থীরা যাচ্ছন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চাইছেন ভোট, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় মো. মাসুদ খান ও মো. শাহজালাল নামে ২ জন মেয়র প্রার্থী, ১৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৭ জন নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পোস্টার লাগানোর অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোন পোস্টার লাগাতে পারবে না।’ ওইসব প্রার্থীদের পোস্টারে মুদ্রণের কোন তারিখ না থাকলেও তা লাগানো হয়েছে। এভাবে ত্রুটিপূর্ণ হাজার হাজার পোস্টার লাগানোর ঘটনায় এখনো নিশ্চুপ প্রশাসন। তাদের এমন ভূমিকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি, যানবাহন, বসতঘর ও দোকানে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-পাল্টা হামলা, প্রচার মাইক ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রিটার্নিং কমকর্তা/সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন ভুগভোগী প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, আচরণবিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বিধান রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাসুদ খানের কোন পোস্টারে মুদ্রণের তারিখ নেই। তিনি মোবাইলফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও আইনি জটিলতায় প্রার্থীতা দোদুল্যমান থাকায় তার কর্মী-সমর্থকরা হতাশা ভুগছেন। ইসলামী আন্দোলন মনোনিত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজালালের পোস্টারেও নেই মুদ্রণের তারিখ। ১-২-৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী খাদিজা পারভীন (আনারস), ৪-৫-৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরোজা বেগম (অটোরিক্সা), দিলরুবা বেগম (আনারস), ৭-৮-৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলি বেগম (অটোরিক্সা), নুরুন্নাহার আক্তার রুবিনা (আনারস), মিতু আক্তার (বলপেন), হাফিজা বেগমের (চশমা) ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. পলাশ হাওলাদার (পাঞ্জাবী), ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. বাবুল জোমাদ্দার (ঢেড়শ), মো. তোফায়েল হোসেন (পাঞ্জাবি), মো. রেজাউল চৌধুরী (পানির বোতল), ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল কুদ্দুছ মোল্লা (পাঞ্জাবি), ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ছরোয়ার হোসেন (ঢেড়শ), মো. আলমগীর হোসেন আলো (পানির বোতল), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আ. ছালাম হাওলাদার (পাঞ্জাবী), ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প), কামরুল হুদা (ডালিম), জাহাঙ্গীর আলম (পানির বোতল), মো. লিটন খান (ঢেড়শ), মো. শহিদুল ইসলাম টিটু (ব্ল্যাকবোর্ড), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল্লাহ আল মামুন (উটপাখি), মো. ফারুক হোসেন (টেবিল ল্যাম্প), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খান জামাল উদ্দিন আহমেদ (উট পাখি), মো. মানিক হাওলাদারের (পানির বোতল) পোস্টারে মুদ্রণের তারিখ উল্লেখ নেই।
পোস্টারে মুদ্রণের তারিখ না থাকার ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী মো. মাসুদ খান বলেন, এ ব্যাপারে আমি জানি না। আমার প্রচার কমিটির সদস্যরা পোস্টার ছাপিয়েছে।
তবে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী জানায়, ‘পোস্টার ছাপানোর ক্ষেত্রে প্রেস কর্তৃপক্ষ ভুল করায় এমন ঘটনা ঘটেছে।’ নির্বাচনী আচরণবিধি জানার পরেও ত্রুটিপূর্ণ পোস্টার কেনো লাগানো হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কোন প্রার্থীই সদুত্তর দিতে পারেননি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক প্রার্থী আগাম পোস্টার ছাপিয়ে রেখেছিলেন। এ কারণে মুদ্রণের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে প্রচার মাইক ভাঙচুর ও প্রচার কর্মীদের মারধরের অভিযোগে গত ১৩ জানুয়ারি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন (লাভলু) তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মো. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আরিফুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের গুরুতর আহত হয়েছেন ১-২-৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মোসা. খাদিজা পারভীন (৪৮)। শুক্রবার বিকেলের ওই ঘটনায় আরো ৪ জন আহত হয়।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জানুয়ারি নলছিটি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তেমন কোনো কঠোর শাস্তির উদ্যোগ নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান মুন্সী বলেন, আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হয়েছে । নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, মুদ্রণের তারিখবিহীন পোস্টার লাগানো হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।