ছারছীনা দরবার শরীফের তিন দিনব্যাপী ১৩০ তম মাহফিল গতকাল বাদ জোহর আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মাদ মোহেব্বুল্লাহ (মা.জি.আ.)। আখেরী মুনাজাতের পূর্বে সমবেত লক্ষ জনতাকে দীনের পথে চলার উপর বাইয়াত করিয়ে হযরত পীর ছাহেব কেবলা বলেন- “সুন্নাত তরীকা অনুযায়ী আমল করে করে আল্লাহ্ তা’য়ালার পিয়ারা বান্দা হয়ে কবরে যেতে হবে।” তিনি বলেন তিন দিন যাবত মাহফিলে ওলামায়ে কেরাম কুরআন হাদিস থেকে অনেক আলোচনা করেছেন। আমাদিগকে তা মনে রেখে আমলী জিন্দেগী গড়ে তুলতে হবে। দুনিয়ার টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, পদ-পদবী কোন কিছুই কবরে যাবে না। পরকালে একমাত্র আমলই হবে সঙ্গের সাথী। আমল ভাল হলে স্থান হবে চিরসুখের জান্নাতে। আর আমল খারাপ হলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে অনন্ত কাল।
হযরত পীর ছাহেব কেবলা তার ভক্ত মুরীদানদেরকে পথ প্রদর্শক হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন- আপনারা তা’লীমী জলসা কায়েম করে সেখানে লোকদের হেদায়েতের পথ দেখাবেন। নিজেরাও নিয়মিত ওজীফা আদায় করে আল্লাহর পিয়ারা হতে সচেষ্ট থাকবেন। দীনিয়া মাদরাসাকে দীনের রক্ষা কবজ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন- হক্কানী আলেম পয়দা করার জন্য আপনাদের সন্তানদের দীনিয়া মাদরাসায় ভর্তি করাবেন। আর সর্ব শক্তি দিয়ে দীনিয়া মাদরাসার পৃষ্ঠ-পোষকতা করবেন।
এ ছাড়াও বাদ ফজর বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর ও হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন বলেন- একজন মু’মিন মুসলমানের জীবনে আকীদা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বদ আকীদা পোষণকারীর কোন নেক আমলই গ্রহণ যোগ্য হয় না। বাংলাদেশেও বদ আকীদা পোষণকারী লোকের সংখ্য নেহায়েত কম নয়। তারা বিভিন্ন ভাবে সর্বজন স্বীকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে হক আকীদার বিরোধিতা করে আসছে। তাই আমাদিগকে সাবধান হতে হবে। কেননা বদ আকীদা পোষণকারী অনেক বক্তা তাদের সুললিত কন্ঠে ওয়াজের মাধ্যমে আম জনতাকে তাদের ভ্রান্ত আকীদার প্রতি উৎসাহিত করে ঈমান হারা বানাচ্ছে। মূলত: তারা মডার্ণ ইসলামের প্রবক্তা। তারা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের স্বত:সিদ্ধ আকীদাগুলির মূলে কুঠারাঘাত করছে। পূর্বেকার মুসলমান নামধারী মুতাজেলা, খারেজী, রাফেজী ইত্যাদি অনেক সম্প্রদায়ের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে জানা না গেলেও তাদের ভ্রান্ত আকীদাগুলি এহেন জ্ঞান পাপী বদ আকীদা ধারী লোকদের মাধ্যমে আজও জীবিত আছে। তারা আমাদের মাযহাব মানাকে শিরক বলে, পীর-মুরীদীকে শিরক বলে, কবর জিয়ারতকে হারাম বলে, মীলাদুন্নবী পালনকে বিদয়াত বলে ইত্যাদি বহু বিষয়ে মতভেদ করে তারা সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টির প্রায়াস পাচ্ছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা মোতাবেক মাযহাব মানা ওয়াজীব, পীর উস্তাদের মত তাই বিষয় ভিত্তিক যথাযথ উস্তাদের থেকে তা’লীম গ্রহণ করা অপরিহার্য, কবর জিয়ারত করা সুন্নাত, মীলাদুন্নবী পালন করা মুসতাহসান। সুতরাং আপনারা এহেন বদ আকীদা পোষণকারী বক্তাদের ওয়াজ শুনবেন না। তাদের সংশ্রব এড়িয়ে চলবেন। মনে রাখবেন- কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নির্ভেজাল আকীদা পোষণ করার কোন বিকল্প নেই।
তিন দিন ব্যাপী এ মাহফিলের শেষ দিন কুরআন-হাদিসের উপর তাত্মিক বিশ্লেষণ মূলক বয়ান রাখেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমদ হুসাইন, ঢাকা দারুন্নাজাত কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মো. ওসমান গনী ছালেহী, হযরত পীর ছাহেব কেবলা সফর সঙ্গী মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ আল মাহমুদ, মাওলানা হাফেজ মো. বোরহান উদ্দিন ও ছারছীনা দারুস্সুন্নাত কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মো. রূহুল আমীন আফসারী প্রমূখ।
আখেরী মুনাজাতে হযরত পীর ছাহেব কেবলা দেশ ও জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যান কামনা করেন। বিশেষ করে করোণা ভাইরাসের ছোবল থেকে বিশ^বাসীর মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারী করেন। সকলের বিগত জীবনের গোনাহ্ খাতা মাফ চেয়ে মুনাজাত কালে লক্ষ জনতার মাঝে ক্রন্দনের রোল পড়ে যায়। অশ্রু সিক্ত নয়নে হযরত পীর ছাহেব কেবলা সকলের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান কামনা করে মুনাজাত শেষ করেন।