মুফতী মুহাম্মাদ শাহ আলম
বুখারীর বর্ণনায় প্রত্যেক রাতের শেষাংশে, শবে বরাতের ফজিলতে বর্ণিত হাদীসসমূহে সন্ধার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে বা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদেরকে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন বলা হয়েছে।
এই ওয়াজ শুনে সাধারণ মুসলমান বিশ্বাস করেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। যখন দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন, তখন অন্ততঃ প্রথম আসমানের উপরে কোথাও তিনি অবস্থান করেন। আর সেটি হবে আরশে আযীম। তিনি আরশেই বসবাস করেন।
সাধারণ মুসলমান তো দলীল বুঝেন না। তাতে সমস্যা নেই বিন্দুমাত্র।
শায়খুল ইসলাম, শায়খুল হাদিস, ড., শায়খতুত তাফসীর, জিহাদী, বিপ্লবী, তুফানী, নাচানী, উত্তমপুরী, মধ্যমপুরী, ছোটপুরী, বড়পুরী হুজুর আল্লামারা চিল্লাইয়া বলে উঠবেন-
আল্লাহ তাআলা আরশে না থাকলে কেনইবা মিরাজে আমাদের নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুতা মুবারক পরিহিতাবস্থায় আরশে নিয়ে আপন কোলে বসিয়ে সাক্ষাৎ দান করেছেন!!!
যাহোক, আমরা এখন দেখব, আসলেই কি আল্লাহ তাআলা শবে বরাতে বা প্রত্যেক রাতের শেষাংশে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন???
এবিষয়টি আমরা দুভাবে আলোচনা করব। একঃ উক্ত হাদীস শরীফ, দুইঃ সাধারণের বোধগম্য করে বুদ্ধিবৃত্তিক।
হাদীস শরীফখানা আরেকটি বর্ণনা হচ্ছে, আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী ফিরিশতা দুনিয়ার আসমানে নেমে এসে ঐভাবে ডাকতে থাকেন ফজর পর্যন্ত। এটিই সবচেয়ে নিরাপদ বর্ণনা। একারণে বুখারীর সকল ব্যাখ্যাগ্রন্থেই বুখারীর উক্ত হাদীসখানার আলোচনায় এই ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা উপর থেকে নিচে নেমে আসা, নিচ থেকে উপরে উঠা বা সকল প্রকার সৃষ্টির কর্মকাণ্ড হতে মুক্ত হওয়ায় এটির অর্থ হবে- আল্লাহ তাআলার ফিরিশতা, অথবা তাঁর রহমত নেমে আসে। আর যারা বাতিল ফিরকা মুজাসসিমা তারা আল্লাহ তাআলা নিজেই নেমে আসেন বলে অর্থ করে।
এখন বুদ্ধিবৃত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ প্রত্যেক রাতের শেষাংশে বা শবে বরাতে সন্ধার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা নেমে আসা বা অবতরণ করা নিম্নীকারণে মেনে নেওয়া যায় না।
## সারা দুনিয়ায় একসাথে সন্ধা হয় না। তাই বাংলাদেশের জন্য অবতরণ করলে সৌদির সাথে কমবেশি ৩ ঘন্টার ব্যবধান থাকায় সৌদির জন্য ৩ ঘন্টা আগে নেমে আসবেন, বাংলার জন্য ৩ ঘন্টা পরে নেমে আসবেন? এরকমভাবে দুনিয়ার অন্যান্য জায়গার জন্য কতবার উঠানামা করতে হবে?
ঠিক, প্রত্যেক রাতের শেষাংশে নেমে আসতে হলেও সময়ের ব্যবধানে কি রকম হবে?
দেখা যাচ্ছে, মুজাসসিমাদের মতে আল্লাহ তাআলার উঠানামা করতে যেয়ে ২৪ ঘন্টার এক মিনিটও স্থির থাকার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই। বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে কখনোই সুস্থ মস্তিষ্ক মেনে নিতে পারে না।
অতএব, নকলী বা কুরআন-সুন্নাহর সামগ্রিক দিক ও আকলী বা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক মিলিয়ে কোনোভাবে আল্লাহ তাআলা উপর থেকে প্রত্যেক রাতের শেষাংশে বা শবে বরাতে সন্ধার সাথে সাথে নেমে আসেন অর্থ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
যারা হাদীসের সরাসরি বাংলা করবেন, তাদের জন্য আবশ্যক হলো, সাথে সাথে উহার ব্যাখ্যা করে দেওয়া। যেন সাধারণ মুসলমান মূল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা নষ্ট করে বর্তমান সময়ের দাবীদার সুন্নী বা বিদআতী সুন্নীদের খপ্পরে পড়ে মুজাসসিমা আকীদা গ্রহণ না করেন। আমিন।
লেখকের ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেয়া